BY Farzana Aktar
2015-01-07 12:35 PM

হতাশা থেকে বেরিয়ে আসুন ৮টি টিপস !!!

আপনি যখন হতাশায় ভুগছেন, নিজেকে মনে হবে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় এবং একাকী ব্যক্তি। কিন্তু আপনি নিজেকে আরো গভীর হতাশায় ডুবে যেতে না দিয়ে  হতাশার চিকিৎসা নিজেই করুন। হতাশা কাটিয়ে উঠার জন্য অনেক মেডিসিন এবং থেরাপি রয়েছে, এছাড়া রয়েছে সহজ কিছু পদ্ধতি যেমন আপনার ব্যবহার, দৈনন্দিন জীবনের রুটিন, এমনকি আপনার চিন্তা করার স্টাইল ইত্যাদি বিষয়গুলো, যার মাধ্যমে আপনি নিজেই নিজের হতাশা কাটিয়ে উঠার চিকিৎসা করতে পারেন।

এখন থেকেই শুরু করুন।

১. রুটিন তৈরি করে নিন-

আপনি যদি হতাশায় ভুগেন, তাহলে আপনার একটি দৈনন্দিন রুটিনের প্রয়োজন পড়বে। কারন হতাশা আমাদের জীবন ধারা, কাজের ধরনের উপর প্রভাব বিস্তার করে। যে কাজ করার কথা তা করতে ইচ্ছা করছে না, আবার দিনে দিনে কাজগুলো না করতে করতে কিছুই করা হচ্ছে না ভেবে আপনি হতাশা থেকে আরো গভীর হতাশায় ডুবে যাচ্ছেন, তাই দৈনন্দির রুটিনের মাধ্যমে সময়মতো প্রয়োজনীয় কাজগুলোকে রুটিন আকারে তৈরি করে নিন এবং নিজের উপর জোর প্রয়োগ করুন যে, কাজগুলো অবশ্যই আপনি সময়মতো শেষ করবেন। দেখবেন যেকোন কাজ শেষ করার পর, ট্র্যাকে ফিরতে পেরেছেন বলে আপনার ভালো লাগবে।

২. লক্ষ্য নির্ধারন করুন-

আপনি হতাশায় ডুবে থাকার সময় মনে হবে আপনাকে দিয়ে কোন কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। এই ধারনা আপনার নিজের সর্ম্পকে আরো বেশী হীনমন্যতায় ভোগায়। তাই প্রতিদিনের লক্ষ্য নির্ধারন করুন এবং অবশ্যই সে লক্ষ্যগুলো অর্জন করুন।

প্রথমে ছোট খাটো কোন কাজ সম্পন্ন করার কথা ভাবুন, এবং শেষ করুন, তারপর না হয় লক্ষ্য বড় করতে থাকুন।

৩. ব্যায়াম করুন-

নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন, প্রতিদিনের ব্যায়াম আপনার শারিরীক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্যকে ভালো রাখবে। ব্যায়াম করা মানেই, আপনাকে ম্যারাথন দৌড়াতে হবে এমন ভেবে ভয় পাবেন না। প্রতিদিন না পারলেও সপ্তাহে ৩/৪ দিন আধা ঘন্টা করে হাটুন, এতে আপনার মস্তিস্কের মধ্যে পজিটিভ চিন্তার প্রাধান্য বাড়বে।

৪. স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করুন-

হতাশা কাটানোর জন্য কোন ম্যাজিক ডায়েট নেই তবে আপনার প্রতিদিনের স্বাভাবিক খাবারের সাথে ওমেগা-৩ তেল যুক্ত মাছ, পালং শাক, বাদাম, অ্যাভাকাডো, ষ্ট্রবেরী, কলা, কফি, চকলেট, টমেটো, গ্রীন টি ইত্যাদি খাবারগুলোও গ্রহন করুন। এই খাবারগুলোকে হতাশা কাটানোর সহায়ক খাবার হিসেবে গবেষনায় দেখা গেছে। সেই সাথে চেষ্টা করুন যে কোন ফাস্ট ফুড পরিহার করে চলতে।

৫. পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করুন-

হতাশা আপনাকে চোখ বন্ধ করতে দেবে না, আবার যদি না ঘুমান তাহলে হতাশা আরো বেশী চরম আকার ধারন করবে।

তাই নির্দিষ্ট একটা সময় মেনে প্রতিদিন বিছানায় যান এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করুন। সাথে সাথেই হয়তো হবে না কিন্তু ধীরে ধীরে আপনার শরীর এতে অভ্যস্ত হতে শুরু করবে। আর অবশ্যই শোবার ঘরে টিভি, কম্পিউটার/ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন রাখুন।

৬. নেগেটিভ চিন্তা-ভাবনা গুলোকে চ্যালেঞ্জ জানান-

হতাশার বিপক্ষে আপনার এই লড়াইয়ের বেশির ভাগটাই হলো মানসিক। আপনি কিভাবে ভাবছেন সেটাই আপনার হাতিয়ার।

পরের বার যখন আপনার মনে হবে, আমার মতো দুঃখী বা আমার মতো কষ্টে কেউ নেই, এমনটা মনে হলেই নিজের যুক্তি কে কাজ করতে দিন, যুক্তি দিয়ে বিচার করে দেখুন আসলেই কি তাই? নিজেকে জগতের সবচেয়ে বেশী অসহায় যে মনে হয় তার সত্যতা আসলে কতটুকু? আশেপাশে দেখার চেষ্টা করুন অন্য মানুষ আপনার চাইতে কতবেশী কষ্টে আছে, কতবেশী অসম্মানিত হচ্ছে, আপনার নেগেটিভ চিন্তাগুলোর উপর আপনার যুক্তিগুলোর প্রয়োগ করুন, নিজের উপর জোর প্রয়োগ করুন, দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার নেগেটিভ চিন্তার উপর আপনার যুক্তিগুলো নিয়ন্ত্রন ফিরে পাচ্ছে এবং আপনিও কিভাবে নিজেকে ফিরে পেতে শুরু করেছেন।

৭. ভিন্নধর্মী কিছু করার চেষ্টা করুন-

প্রতিদিনের কাজের পাশাপাশি ভিন্নধর্মী কাজগুলো করুন। বই পড়তে পারেন, আগে যদি পড়ার অভ্যাস থাকে সেটাকে ফিরিয়ে আনুন আর যদি না থাকে নতুন করে শুরু করুন। কিন্তু অবশ্যই নেগেটিভ ধারনা দেবে এমন কোন বই পড়বেন না বা মুভি দেখবেন না, কারন নেগেটিভ সবকিছুর বিপক্ষেই আপনি অবস্থান নিয়েছেন এবং আপনি একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন।

৮. আনন্দ করার চেষ্টা করুন-

আপনি কোন কিছুতেই আনন্দ পাচ্ছেন না, আপনি হতাশায় আছেন বলেই পাচ্ছেন না, কিন্তু আপনাকে চেষ্টা তো করতে হবে। সবার সাথে থাকুন, অংশগ্রহন বাড়ান, আনন্দ পাওয়া এবং দেয়া দুটোর চেষ্টাই অব্যাহত রাখুন। মুভি দেখুন, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন, পরিবারের সাথে সময় কাটান এবং অবশ্যই হাসতে চেষ্টা করুন। আনন্দ করার চেষ্টা আপনাকেই অব্যাহত রাখতে হবে।

যতবেশী আনন্দের মাঝে নিজেকে নিতে পারবেন, ততবেশী দ্রুত হতাশা থেকে আপনি নিজেকে বের করে আনতে পারবেন।

হতাশা যখন আপনাকে ঘিরে রেখেছে, কোন কিছুতেই আপনি নিজেকে রাখতে পারছেন না, কিন্তু আরো বেশী গভীর হতাশায় ডুবে যাবার আগেই নিজেকে আপনি বাঁচাবেন। লড়াইটা আপনার নিজের জন্যে, তাই চেষ্টাটাও আপনাকেই করতে হবে। আর নিজেকে প্রতিনিয়ত মেসেজ দিন এই লড়াইতে আপনি কিছুতেই হারবেন না।

আপনার জীবন হতাশামুক্ত, প্রানচঞ্চল এবং সুন্দর হোক।