BY Farzana Aktar
2015-03-01 12:06 PM

ব্যবসায়িক পার্টনার নির্বাচনের ক্ষেত্রে ৯টি বিবেচ্য বিষয় !!

বিয়ের মতোই পার্টনারশীপ ব্যবসায় শুরু হয় আস্থা, বিশ্বাস আর আকাঙ্খা নিয়ে, যার মধ্যে কিছু অর্জিত হয় আবার কিছু কিছু ব্যবসায় শেষ হয় অনাস্থা, বিশ্বাসভঙ্গ এবং আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে।

অনেকেই আপনার পার্টনার হতে চাইবেন কিন্তু আপনি কি সবাই কে নিতে পারবেন ? অবশ্যই না। আপনার সাফল্য লাভের এই সুদীর্ঘ যাত্রায় আপনার এমন পার্টনার দরকার যার প্রতি আপনি আস্থা রাখতে পারবেন, সাফল্য লাভ করার সাহস পাবেন, সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবেন এবং তার পাশে থাকায় মানসিক শক্তি পাবেন। তাই হুট করে শুরু না করে দিয়ে, চিন্তা-ভাবনা করে পার্টনার নির্বাচন করুন।

কিভাবে বুঝবেন কোন মানুষের সাথে আপনার পার্টনারশীপ ব্যবসায় যাওয়া উচিত।  কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিনঃ

১. আমার ব্যবসার অংশীদারের কাছে আমার প্রত্যাশা কি?

আপনার এমন অংশীদার বেছে নেয়া উচিত, যিনি আপনি যা করতে পারেন তার চাইতে ভিন্ন কিছু করতে পারেন। আপনি যদি ক্রিয়েটিভ হোন সেক্ষেত্রে আপনার পার্টনার হতে পারেন যিনি অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত কাজ করতে পারেন। আপনার টাকা বিনিয়োগ করছেন সেক্ষেত্রে আপনার পার্টনার হবে যিনি বাজারজাত করনে কাজ করতে পারবেন, কাজ আনতে পারবেন অথবা যার কানেকশান অনেক। যদি আপনি লাজুক ব্যক্তি হোন সেক্ষেত্রে আপনার পার্টনার হবেন মানুষের সাথে মিলে যাওয়ার সহজাত গুন সম্পন্ন ব্যক্তি এতে আপনি ব্যালেন্স তৈরি করতে পারবেন। আপনার পার্টনার আপনার মতো হলে আপনি হয়তো কমফোর্ট ফিল করবেন কিন্তু আপনার ব্যবসায়ের প্রয়োজন মেটাতে পারবেন না এবং ব্যালেন্স তৈরি করতে পারবেন না।

২. কত সময় আপনার অংশীদার আপনাকে দিবেন বা আপনি তার কাছ থেকে আশা করেন?

পার্টনারের আপনার মতো একই সময় ব্যবসায়ে দিতে হবে তেমন প্রয়োজন নেই, তবে আপনার পার্টনার প্রয়োজনীয়তা কে অনুভব কতটুকু করতে পারেন এবং তার টাইম কমিটমেন্ট কেমন সেটা হিসেব করতে হবে।দিনে কতক্ষন ব্যবসায়ে তিনি সময় দিবেন এবং আপনি তার কাছে কতটুকু আশা করছেন এবং তিনি টাইম কমিটমেন্ট রক্ষার ক্ষেত্রে কতটুকু সজাগ এবং দায়িত্ববোধের পরিচয় দেন সেটাও আপনাকে জানতে হবে, কারন ব্যবসায়ে যে তারও সময় দেয়া প্রয়োজন এই বিবেচনা বোধটুকু তার থাকতে হবে, নয়তো দেখা যাবে তিনি নামেই পার্টনার কিন্তু ব্যবসায়ের সার্বিক দিক পরিচালনার সমস্যাগুলোর সময় আপনি তাকে পাবেন না।

৩. আপনার পার্টনারের ব্যবসায়ের প্রতি আগ্রহ কি আপনার মতোই শক্তিশালী?
আপনি কফিশপ খুলছেন নাকি ডিজাইন শপ খুলছেন সেটা কোন বিষয় নয়, আপনাকে বুঝতে হবে, আপনার পার্টনারের ব্যবসায়ের প্রতি কমিটমেন্ট আপনার মতোই শক্তিশালী কিনা, কারন আপনার খুব ভালো বন্ধুও যদি আপনার পার্টনার হয়ে থাকে যতটুকু আগ্রহ আর এক্সাইটমেন্ট নিয়ে আপনারা শুরু করবেন, বন্ধুর কমিটন্টের অভাব থাকলে খুব তাড়াতাড়িই সেটা কমতে থাকবে এবং তার প্রভাব আপনার ব্যবসাতে পরবে। তার কমিটমেন্ট আপনার মতো না হলে, তার অনাগ্রহ ব্যবসায়ের ব্র্যান্ডিং তৈরির জন্য আপনার যে অক্লান্ত প্রচেষ্টা সেগুলোকে বাধাগ্রস্ত করবেন এবং সুফল পাওয়ার দরজা গুলোকে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

৪. আপনার পার্টনারের পরিবারের সমস্যা পরিমান কতটুকু এবং তিনি সেই সমস্যাগুলো কে ব্যালেন্স করে ব্যবসাকে প্রাধান্য দিতে পারবেন নাকি ব্যবসায় তা কাছে সেকেন্ডারি ইন্টারেষ্ট পাবে?

যদি আপনার পার্টনারের পরিবারে প্রেগনেন্ট ওয়াইফ থাকে অথবা বৃদ্ধ বাবা মা থাকে যাদের কে তার বাড়তি যত্ন নিতে হয়, সেক্ষেত্রে ব্যবসার সাথে তার কিছুটা দূরত্ব বাড়বে, সেজন্যই আপনাকে খুব ব্রুটালি সৎ থাকতে হবে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে আপনি যখন পার্টনারশিপ তৈরি করছেন। আপনার পার্টনার যখন বলছেন, তার স্ত্রী তার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ১০০ ভাগ অবদান রাখে এবং তাকে নিয়ন্ত্রন করেন, সেক্ষেত্রে তার স্ত্রী যদি পার্টনারশীপ ব্যবসায়ের জন্য একান্ত সায় না থাকে, সেক্ষেত্রে ব্যবসা শুরু হয়তো তিনি করবেন  কিন্তু পরবর্তী সময় থেকেই আপনাদের ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করবে, কারন তিনি তার বিবেচনায় কোন কাজ করতে পারবেন না। তাই জেনে নিন পরিবার এবং ব্যবসা দুটোকেই সমান প্রাধান্য দেয়ার মতো দক্ষতা এবং নিজের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা তার আছে কিনা, নয়তো ‍তার সিদ্ধান্ত নেবার দূর্বলতা ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

৫. সে কঠিন পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করে?

আপনার জন্য জানাটা জরুরী আপনার পার্টনার কঠিন পরিস্থিতিতে পরে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কিভাবে সেটাকে গ্রহন করে এবং মোকাবেলা করে, কারন ব্যবসায় কে দাড় করানোর এই যাত্রায় অনেকবারই আপনাকে এমন জটিল পরিস্থিতিতে পরতে হবে, সেক্ষেত্রে তিনি কি আপনার পাশে থেকেই তার দায়িত্ব পালন করবেন কিনা, আপনার সাথেই থাকবেন নাকি সহজেই হাল ছেড়ে দিবেন অথবা অন্য আচরণ করবেন। তার চরিত্রের অংশটুকু এক্ষেত্রে আপনি বিবেচনা করতে পারেন তিনি মানুষের সাথে কতটুকু সৎ থাকেন অথবা আগে কোথাও তিনি যদি ব্যবসায়ে পার্টনার হিসেবে থেকে থাকেন তাদের সাথে তার আচরন কেমন ছিল।নাকি তিনি সামগ্রিক বিবেচনায় তার লাভটুকুই শুধু বোঝেন কিন্তু সমস্যার দায়ভার নিতে চান না এবং বিপদ মোকাবিলা করতে চান না। কারন ব্যবসায়ে আপনার হিসেব থাকবে বিপদে আপনি তাকে পাশে পাবেন, সবাই মিলে মোকাবিলা করবেন কিন্তু সমস্যা দেখা দিলে আপনি একা সেক্ষেত্রে আপনার ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য।

৬. তাদের কাছে আপনার কাছে কি প্রশ্ন আছে?

জব ইন্টারভিউতে চাকুরীপ্রার্থীর প্রশ্ন শুনে যেমন জানা যায় প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে  এবং এই চাকুরী সর্ম্পকে তার আগ্রহ কেমন ঠিক তেমনি আপনার পার্টনারদের আপনার সর্ম্পকে প্রশ্নগুলো কি তার মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন এই ব্যবসায়ে আসলেই তাদের আগ্রহ কতটুকু, ভবিষ্যত কে তারা কিভাবে দেখতে চান এবং তাদের যদি আগ্রহ থাকে তারা অবশ্যই জানতে চাইবেন আপনার উদ্দেশ্য, নির্ভরযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা, চরিত্র ঠিক যেমনটি আপনি তাদের কাছে জানতে চান এবং প্রত্যাশা করেন।

৭. সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে তার অবস্থান কেমন?
আপনার পার্টনার হয়তো অনেক স্কিলড বলেই আপনি তাকে নিতে আগ্রহী কিন্তু আপনি নিশ্চিত নন তিনি আসলেই কতটা স্কিলড, তিনি যদি আপনার ব্যবসার বিনিয়োগকারী হোন সেক্ষেত্রে খোজ নিন আসলেই তার সামাজিক অবস্থান কেমন, তিনি যদি স্কিলড হোন সেক্ষেত্রে নিশ্চিত হোন আসলেই তার অভিজ্ঞতা কেমন, তার অনেক কানেকশান আছে যদি এ কারনেই আপনি তাকে নির্ধারন করে থাকেন সেক্ষেত্রে আসলেই তার পর্যাপ্ত কানেকশান আছে কিনা যাচাই করে নিন, পার্টনার নির্বাচন করতে চেয়ে কোন মিথ্যাবাদী মানুষের পেছনে যেন আপনার সময় নষ্ট না হয়।

৮. আপনার পার্টনার সবকিছু লিখিত ভাবে রাখতে আগ্রহী?

অনেক পার্টনারশীপ ব্যবসায় শুরু হয় শুধু হাতে হাত রেখে কিন্তু ধ্বংসাত্বক হতে খুব বেশী সময় নেয় না। ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে সবকিছু কাগজে লিখিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। আপনার ব্যবসায়িক পার্টনার যদি সৎ এবং বিবেচনা বোধ সম্পন্ন হোন সেক্ষেত্রে তিনি অবশ্যই সেটাকে লিখিত আকারে দেখতে চাইবেন  অথবা আপনার অবর্তমানে আপনার পার্টনারশীপে কোন সুবিধা আপনার পরিবারেরর কেউ পাবে কিনা তা কতটুকু লিখিত আকারে তিনি আগ্রহী সেটাকেও বিবেচনায় রাখুন। আর যদি বার বার আপনার বলা সত্তেও তিনি আগ্রহী না হোন বা গড়িমসি করেন সেক্ষেত্রে তার অন্য কোন চিন্তা ভাবনা থাকতে পারে তাই আগে থেকেই বিবেচনা করুন।

৯. সত্যিই কি আমার কোন পার্টনারের প্রয়োজন আছে?

আপনি যদি অর্থনৈতিক ভাবে পুরোপুরি সামর্থ্যবান হোন এবং টাকা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজগুলো ৯-৫ টা অফিসের মাধ্যমে করাতে চান সেক্ষেত্রে পার্টনারশীপে অযথা কারো অংশগ্রহনের সুযোগ না দিয়ে নিজের ব্যবসায় একাই করুন, আর যদি মনে হয় আপনার পার্টনারের প্রয়োজন আসলেই আছে এবং এই ধরনের স্কিলড মানুষের ব্যয়ভার আপনি বহন আপনি করতে চাচ্ছেন না সেক্ষেতে আপনার পার্টনাশীপই ভালো।

কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয় আরেকজন মানুষকে পুরোপুরি চেনা অথবা বিচার করা যে মানুষটি আপনার জন্য আসলেই যথাযথ কিনা, তবে গতানুগতিক কিছু প্রশ্ন আপনাকে নিশ্চয়ই সহায়তা করবে সেই বিবেচনার পথে কিছুটা এগিয়ে দিতে।

ব্যবসা আপনার কাছে যতটুকু প্রাধান্য পাচ্ছে আপনার পার্টনারের কাছেও যেন সমান গুরুত্ব পায় তাই বিবেচনা করুন।

আপনি যখন ব্যবসা করছেন আপনার দরকার কার্যকর একজন পার্টনার, যিনি আপনার মতোই আপনার পাশে দাড়িয়ে সমস্যাগুলোকে বুঝবে এবং সমাধানের জন্য সেও আপনার মতোই চেষ্টা করবে, আপনার কাছে প্রাধান্যই হবে আপনার ব্যবসা, এবং এর জন্য সহায়ক হবে এমন সব সিদ্ধান্তই আপনি গ্রহন করবেন, আপনার সম্পূর্ন দায়িত্ব আপনি পালন করার পরও যেন পার্টনারের দায়িত্বহীনতার দায়ভার ব্যবসাকে নিতে না হয়, ভবিষ্যত নিয়ে আগেই ভাবুন, তাই পার্টনার নির্বাচনের ক্ষেত্রে মহানুভব না হয়ে, কমার্শিয়াল হোন।