উদ্যোক্তা সবাই হতে পারে তবে সফল উদ্যোক্তা সবাই হতে পারেনা। সফল উদ্যোক্তা হবার জন্য কিছু বিষয় আপনাকে জানতে হবে। নিচে থেকে জেনে নিন সফল হবার কিছু সিক্রেটঃ
১. সাফল্য লাভের জন্য প্যাশিওনেট হোন-
আপনি যে আইডিয়া নিয়ে কাজ করছেন তার জন্যে বাড়তি সময় দিতে যেয়ে আপনাকে অন্যান্য অনেক কিছু ছাড় দিতে হবে, তাহলেই আপনার টিমে যারা যোগ দিবে তারাও আপনাকে দেখেই শিখবে যে কোন কিছু অর্জন করতে হলে তার জন্য কিছুটা ছাড় দিতে হয়।
২. নির্দিষ্ট সুযোগগুলোকে গুরুত্ব দিন-
একজন সফল উদ্যোক্তা এবং অনেক অসফল উদ্যোক্তার পার্থক্য এখানেই। অন্যান্য মানুষরা যেখানে একসঙ্গে সব সুযোগকেই কাজে লাগাতে চান, একজন ভালো উদ্যোক্তা সেখানে অনেক সুযোগের মাঝে অল্প কিছু সুযোগকে নিজের জন্য খুজে বের করেন সেখানে মনোযোগ দেন, পরিশ্রম করেন এবং সাফল্য লাভ করেন। বেশীরভাগ মানুষই সব সুযোগ গুলোকে কাজে লাগাতে সব কিছুতেই মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করেন যার ফলে কোনটাই ঠিকমতো হয় না।
এক্ষেত্রে ষ্টিভ জবসের একটি কথা অনুকরনীয় হতে পারে,“ আমি যা সব কিছু করেছি এবং যা কিছু করিনি তার জন্য সমান ভাবে গর্বিত। কারন হাজার কিছুকে না বলতে পারাটাই হলো আসলে ইনোভেশন ”।
তাই সব সুযোগগুলোকেই সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন না ।
৩. পরিশ্রম থেকেই সাফল্য আসে -
একজন উদ্যোক্তাকে স্বপ্ন দেখেন এবং সেটা বাস্তবায়নের জন্য কঠিন পরিশ্রম করেন। সফল উদ্যোক্তারা তাদের সর্ব্বোচ্চ পরিশ্রম দিয়েই জীবনে সফল হয়েছেন। তাই আপনি আপনার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করুন। আপনি যা কিছু নিয়ন্ত্রন করতে পারেন সেগুলোতে মনোযোগ দিন, আপনার পরিশ্রম আপনি করে যান এবং অপেক্ষা করুন ফলাফল কি আসে ।
৪. সাফল্য লাভের দীর্ঘ পথকে উপভোগ করার চেষ্টা করুন-
সবাই আপনাকে বলবে দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্যের দিকে মনোযোগী হতে, কিন্তু সফল মানুষেরা লক্ষ্যের দিকে মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যের পথে যাত্রার প্রতিটা মুহুর্তকেই উপভোগ করেন এবং নতুন করে অনুপ্রানিত হোন। তাই আপনি এবং আপনার টীমের প্রতিটা মানুষকে নিয়ে সাফল্য লাভের পথের যাত্রায় ছোট ছোট অর্জনগুলোকেও উপভোগ করুন।
৫.আপনার নিজস্ব যুক্তি এবং বিবেচনায় আস্থা রাখুন-
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কোন কোন ক্ষেত্রে লজিকের চাইতেও বেশী কাজ করে। হয়তো ব্যবসার কোন একটা সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে আপনি অস্বস্তিতে ভুগছেন কারন আপনার এক্সেল স্প্রীডশীট লজিক বলছে এই সিদ্ধান্তটা একভাবে নিতে আর আপনার মস্তিস্কের ক্যালকুলেশন অথবা আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে আপনাকে অন্য সিদ্ধান্ত নিতে। মাঝে মাঝে নিজের উপর আত্নবিশ্বাসী হোন এবং আস্থা রাখুন। বিশেষ করে যখন দেখতে পাচ্ছেন বাস্তবতা ধীরে ধীরে আপনার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং আপনার ভিতরের কন্ঠস্বরটা বলছে আপনাকে এখনই সচেতন হতে ।
৬. নমনীয় কিন্তু জেদী হোন-
নতুন নতুন বিষয় জানা নতুন তথ্য আয়ত্বে আনা ইন্টারনেটের বদৌলতে এখন সহজ বিষয়, তাই প্রতিনিয়ত নতুন কিছু আয়ত্ব করুন, নতুন কিছু জানুন। আপনি যা করছেন বা করতে যাচেছন তার জন্য পড়াশোনা করুন জানতে থাকুন মানুষ কিভাবে সাফল্য আনছে, কোথায় ভুল করছে, সব কিছু থেকেই শিক্ষা নিন। যদি আপনার ভিতরের কন্ঠস্বর বলে আপনাকে সচেতন হতে তবে বোঝার চেষ্টা করুন কোথাও ভূল হচ্ছে কিনা এবং ভূল হলে সেটা কোথায় হচ্ছে, সমাধান করার চেষ্টা করুন। সিদ্বান্ত নেবার ক্ষেত্রে নিজেকে নির্ভুল না ভেবে নমনীয় হোন কিন্তু লক্ষ্যের প্রতি অটল থাকুন। মনে রাখবেন সাফল্য এবং ব্যর্থতা পাশাপাশি হাটে।
৭. একটি সুদক্ষ এবং নির্ভরযোগ্য টিম তৈরি করুন-
আপনার লক্ষ্য অর্জনের পথে একটি সঠিক টিম তৈরি করতে আপনাকে কিছুটা পরিশ্রম করতেই হবে, সেই সাথে এটাও মানতে হবে আপনি যেমন সবকিছুতে পরিপূর্ন জ্ঞান রাখেননা তেমনি প্রতিটা মানুষেরই সবদিক সম্পূর্ন পাবেন না। অনেক খুজে এবং সময় নিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় দক্ষ মানুষের টিম তৈরি করুন যারা আপনাকে আরো বেশী পরিপূর্ন করবে। আপনার মতো মানুষগুলো আপনাকে আকর্ষন করতে পারে তবে সঠিক কৌশলটা হলো সেই মানুষটাকে বেছে নেয়া যে আপনার মতো নয় কিন্তু তার কাজে সে পারফেক্ট এবং যেই কাজটা আপনি পারেন না সেটা সে পারে।
৮. কাজ করুন, কাজ করুন এবং কাজ করুন-
শুধু মাত্র কৌশল দিয়ে আপনি খেলা বা যুদ্ধ জয় করতে পারবেন না যতক্ষন পর্যন্ত না আপনি সে কৌশল গুলোকে কাজে লাগাতে শুরু করবেন। আপনার পরিকল্পনাকে সঠিকভাবে তৈরি করার জন্য আপনি যত বেশী সময়ই ব্যয় করেন না কেন.আপনার পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে যখন কাজ করবেন তখনি আপনি আসল সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হবেন, সেই সমস্যাগুলো সমাধান যত করবেন আপনি সাফল্য লাভের জন্য ততবেশী অগ্রগামী হবেন। কারন বাস্তবতার শিক্ষাই হলো সবচেয়ে বড় শিক্ষা। তাই পরিকল্পনা তৈরি করতে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় না করে পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগাতে শুরু করুন যত দ্রুত সম্ভব।
৯. সৎ থাকুন এবং সততা বজায় রাখুন-
আপনার কাজের ক্ষেত্র, আপনার সহকর্মী, ক্লায়েন্ট,আপনার পন্য অথবা সেবা যা কিছুই হোক সেখানে সৎ থাকার চেষ্টা করুন। সততার একটি আলাদা ক্ষমতা আছে, যা আপনাকে সাফল্য পেতে বাড়তি নিয়ামক হিসেবে সহায়তা করবে। আপনি যদি আপনার সব কিছুতেই সৎ থাকতে পারেন আপনার বাড়তি একটি আত্নবিশ্বাস থাকবে যা আপনাকে সাফল্যের পথে হাটতে অনুপ্রেরনা যোগাবে সেই সাথে আপনার সহকর্মী, ক্লায়েন্ট সবার কাছেই আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে পারবেন।
১০. মানুষের সাথে সদ্ভাব রাখুন-
প্রতিদিনই বন্ধু বাড়ান কিন্তু শত্রু একজনও না, বরং পারলে যার সাথে আপনার শত্রুতা আছে তাকেও বন্ধু বানান। কারন আপনার সাফল্য লাভের যাত্রায় কাকে কখন কিভাবে প্রয়োজন হবে আপনার জানা নেই, সবাইকে প্রয়োজন আপনার নাও হতে পারে কিন্তু সুযোগ তৈরি করে রাখুন। আর কারো কাছ থেকে কোন সাহায্য গ্রহন করলে চেষ্টায় থাকুন যতটুকু সাহায্য গ্রহন করেছেন তার চাইতে বেশী যেন আপনি ফিরিয়ে দিতে পারেন তাকে।এতে আপনার সম্পর্কে মানুষের মনোভাব পজিটিভ হবে, মানুষের শুভকামনা এবং সহায়তায় আপনার সাফল্যের দিকে চলার পথও মসৃন হবে।