BY
2014-09-21 05:57 PM

উদ্যোক্তা হবার জন্য ৬টি পদক্ষেপ

আপনি যদি আপনার নিজস্ব একটি ব্যবসা দাড় করাতে চান তাহলে আপনাকে কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে। একজন উদ্যোক্তা হাই রিস্ক নিয়ে হাই প্রফিট অর্র্জন করেন। উদ্যোক্তার যেমন প্রচন্ড মানসিক চাপ সহ্য করতে হয় তেমনি এর মাধ্যমে যে সাফল্য এবং টাকা আপনি অর্জন করতে পারবেন তা হাজার ভালো চাকরীতেও নেই। একই সাথে আর্থিক, মানসিক প্রশান্তি এনে দিবে। তবে উদ্যোক্তা হওয়া যতটা কঠিন ভাবছেন ততটা কঠিন নয় যদি আপনার ভালো একটি আইডিয়া, ধৈর্য্য এবং ঝুকি নেবার সাহস থাকে, তাহলে যত দেরীতে হবে ভাবছিলেন, তারও আগে আপনি আপনার নিজের বস হয়ে যেতে পারবেন।

ষ্টেপ ১- একটা ভালো আইডিয়া ভেবে নিন- বেশীর ভাগ ব্যবসায় শুরু হয় ভালো একটি আইডিয়ার মাধ্যমে, হোক সেটা পন্য অথবা গ্রাহকের জন্য সেবা প্রদান অথবা পন্য ও সেবা দুটোই। আপনার আইডিয়া নিয়ে আপনার পরবর্তী কাজগুলো হবে-

  • আইডিয়া ভেবে নেওয়ার সময় বাজারে প্রচলিত পণ্য বা সেবা কে গ্রহণ করার জন্য আপনি ভিন্ন ভাবে কিভাবে অনুপ্রাণিত করতে পারেন সেটা নিয়ে ভাবুন।

  • আপনার আইডিয়া বাস্তবায়নের জন্য পণ্য ও সেবা উৎপাদন, উৎপাদনের সময় ও এর জনপ্রিয়তা এবং গ্রহনযোগ্যতা তৈরির সময়ে কি পরিমান টাকার প্রয়োজন হবে তা নিয়ে ভাবুন।

  • আর যদি কোন আইডিয়া না থেকে থাকে তাহলে আপনার টার্গেট মার্কেট বা ক্রেতা চিহ্নিত করুন, তাদের কে কোন ধরনের পণ্য /সেবা দিতে চান, সেই সব পণ্য/সেবা তারা কোথা থেকে কিভাবে কিনেন, ওই সব পণ্য/সেবার কোন গুনগত বিষয়টি তারা পছন্দ করেন বলে কিনেন, এগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন। তার মধ্যে থেকে যে কোন ৩টি নির্বাচন করুন, এগুলোর ‍উৎপাদন খরচ, সময় এবং জনপ্রিয়তা যাচাই-বাছাই করুন এবার বেছে নিন কোন পণ্য/সেবার আইডিয়া আপনার জন্য সহায়ক এবং কোনটি আপনি গ্রহণ করতে চান।

 

ষ্টেপ ২- একটি বিজনেস প্ল্যান লিখুন- সবকিছুর পরিকল্পনা করুন বাস্তবতাকে হিসেবে রেখে, পুরো পরিকল্পনা লিখুন। সময় নিয়ে আপনার পন্য/সেবার প্রতিটি পদক্ষেপ ভালোভাবে যাচাই করুন। আপনার বিজনেস প্ল্যানে নিচের বিষয়গুলো অর্ন্তভুক্ত করতে পারেনঃ

  • পন্য / সেবার বিবরণ- আপনার পন্য / সেবাটি কেমন হবে, কি কি ম্যাটেরিয়াল আপনার প্রয়োজন হবে। আপনার পণ্যটিকে কিভাবে আকর্ষনীয় করবেন।

  • মার্কেট অ্যানালাইসিসি- আপনার পণ্য / সেবা গ্রহীতা কারা, তারা কোথায় কেনাকাটা করে, তারা কোন স্থানে বসবাস করে।

  • প্রতিযোগীতা- আপনার প্রতিযোগী কে হবেন? তারা ব্যবসায় কেন এবং কোনদিক থেকে শক্তিশালী? আপনি কিভাবে তাদের কে প্রতিযোগীতায় পেছনে ফেলবেন?

  • মার্কেটিং- আপনার পণ্যের মার্কেটিং কিভাবে করবেন? কিভাবে আপনার পণ্যকে ক্রেতার কাছে দেখাতে চান? আপনি কোথায় কোথায় বিজ্ঞাপন দিবেন? আপনার প্যাকেজিং লাইন কি হবে?

  • সেলস- আপনি কোথায় বিক্রয় করবেন? আপনার কাষ্টমারদের আপনার পণ্য কেনার জন্য আপনি কিভাবে উদ্বুদ্ধ করবেন? কখন আপনি বিক্রয় শুরু করবেন? আপনার সেলস পূর্ভাবাস কি হবে?

  • উৎপাদন- আপনার পণ্য আপনি কিভাবে তৈরি করবেন? সব পদক্ষেপগুলো লিখে নিন। আপনার পণ্য উৎপাদনে কোন কোন ম্যাটেরিয়াল আপনার প্রয়োজন হবে? কখন, কিভাবে এবং কোথায় আপনি উৎপাদন করবেন? আপনার পণ্যের দাম কি হবে?

  • অর্থের যোগান- আপনার ব্যবসা শুরু করার জন্য কত টাকার প্রয়োজন হবে? টাকার যোগান কিভাবে হবে?

  • লাভ হিসেব- আপনার কি পরিমান পণ্য কত দামে বিক্রয় করতে পারলে আপনার লাভ হবে, কত সময় পরে আপনি লাভ করতে পারবেন বলে আশা করছেন?

৩. যদি বিজনেস প্ল্যান না করতে চান- মার্কেটিং, সেলস এসব বিষয়ে ধারনা নেই বলে যদি আপনি প্রথমে কোন প্ল্যান তৈরি করতে না চান সেক্ষেত্রে আপনি যে পন্যটি বিক্রয় করতে চাচ্ছেন তা বিক্রয় শুরু করুন, দেখুন কাষ্টমারকে খুশি করতে পারছেন কিনা এবং মানুষের রেসপন্স কেমন হচ্ছে। তারপর আরোপণ্য যোগান দিতে শুরু করুন, এভাবে বাজারের সম্পর্কে আপনি বাস্তব ধারনা নিতে পারবেন এবং সহজেই অনুমান করতে পারবেন কিভাবে আপনি উপরের বিজনেস প্ল্যানটিকে আরো বেশী যথাযথ ভাবে তৈরী করতে পারবেন।

৪. বিনিয়োগকারী যোগাড় করুন- টার্গেট করুন কাদের কাছে বা কোন কোম্পানীগুলোর আপনি বিনিয়োগ আশা করছেন। আপনার আইডিয়াটা যদি ভালো হয়, তারা অনায়াসে আপনার ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে।

কেন আপনার পণ্যটি সবচেয়ে ভালো হবে? বাজারে আপনার পন্য অন্যদের তুলনায় কিভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আসতে পারবে, এই সবগুলো বিষয়কে পুরোপুরি বিবরণ আকারে পাওয়ার পয়েন্টে প্রেজেন্টেশনের জন্য তৈরি করুন।

আপনি কি পরিমান প্রফিট করতে পারবেন বলে আশা করছেন এবং বিনিয়োগকারী কত শতাংশ লভ্যাংশ পাবে অথবা তাদের অন্যান্য আর কি লাভ হবে সেটা তাদের কাছে  ভালোভাবে তুলে ধরুন।

তবে সাধারনত বিনিয়োগকারীরা বাজারে প্রচলিত এবং সফল ব্যবসাতে বিনিয়োগে বেশী আগ্রহী হয় কারন এতে তারা রিস্ক ফ্রি থাকতে পারবে বলে মনে করে। তাছাড়া বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সময় তাড়াতাড়ি লাভের অথবা বেশী লাভের আশায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক শর্ত জুড়ে দেন যা আপনার ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক পরিচালনার ধারনাগুলোকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই বিনিয়োগকারী ছাড়াই যদি স্বল্প পরিসরে আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারেন তাহলে প্রাথমিক ভাবে আত্নীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে শুরু করতে পারেন কারণ এক্ষেত্রে আপনার ব্যবসায়ের নিয়ন্ত্রন আপনার হাতেই থাকবে। তাই প্রথমেই আপনার স্বপ্নের নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে না তুলে দিয়ে প্রয়োজনে ছোট পরিসরে নিজেই নিজের ব্যবসায় বিনিয়োগ করুন।

৫. বিক্রয় করা- এবার আপনার পন্য ডিষ্ট্রিবিউট এবং বিক্রয় শুরু করুন। যখন আপনি আয় করতে শুরু করবেন তারমানে আপনার ব্যবসা আপনি শুরু করতে পেরেছেন। এখন আপনি টেষ্ট করতে পারছেন আপনার টার্গেট করা মার্কেট সম্পর্কে, জানতে পারবেন কোন প্ল্যান কার্যকর আর কোনটা কার্যকর হচ্ছে না। আপনার নতুন নতুন ব্যবসায়িক প্ল্যান করার প্রয়োজনীয় রসদ এখন আপনি পাবেন আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এবং আরো বেশী উন্নত পরিকল্পনার গ্রহন করতে পারবেন। আর যদি পণ্য / সেবা বাজারে আনার পরও আশানুরূপ আয় না করতে পারেন তাহলে খুঁজে বের করুন কেন হচ্ছেনা, কোথায় সমস্যা হচ্ছে এবং সমাধান করুন ।

৬. নেটওয়ার্ক বাড়ান- অন্যান্য উদ্যোক্তাদের সাথে যোগাযোগ বাড়ান। সামাজিকভাবে আরো বেশী উদ্যোক্তার সাথে আপনি নেটওয়ার্ক বাড়াতে পারলে আপনার সাথে নতুন নতুন মানুষের যোগাযোগ দিনে দিনে বাড়বে যা আপনার জন্য আরো বেশী বেশী সুযোগ তৈরি করবে। তাছাড়াও আপনি শিখতে পারবেন উদ্যোক্তারা কিভাবে চিন্তা করে, তাদের আচরণ, ব্যবসায়িক সুযোগ তৈরির ক্ষমতা, একই উদ্যোগের বহুমুখী ব্যবহারের পরিকল্পনা ইত্যাদি বিষয়গুলো, যেগুলো আপনি টাকা দিয়ে কোথাও শিখতে পারবেন না।

উদ্যোক্তা হবার জন্য আপনাকে হিসেবী হতে হবে, প্রতিটা পদক্ষেপ ফেলতে হবে জেনে-বুঝে। তাই উপরের পদক্ষেপগুলো অনুসরন করতে পারেন সেই সাথে আরো কিছু আপনার মনে আসলে সেটাকেও আপনার পদক্ষেপে অর্ন্তভূক্ত করে নিন এবং এগিয়ে যান।